

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ বেশ কিছু দিন আগে একটি খবর শিরোনামে আসে লোধা (Lodha) সম্প্রদায়ের ১৩ বছর বয়সী একটি শিশুকে খাবার চুরি করার অভিযোগে মারধর করা হয়।পরে জানা যায় সাবাং এর বোরোচরা গ্রামের বাসিন্দা শিশুটি ক্ষুধার কারণে খাবার চুরি করেছিল। এরপর ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শত শত এলাকাবাসী স্থানীয় একটি রাজ্য সড়ক অবরোধ করে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
সেদিনের সেই ঘটনা স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর পুরো লোধা সমাজের অর্থনৈতিক তথা সামাজিক চিত্র বোঝার ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ মাত্র।লোধারা পশ্চিমবঙ্গের তিনটি উপজাতির মধ্যে একটি যারা আদিম উপজাতি গোষ্ঠীর অন্তর্গত। ভারতের অন্যান্য উপজাতিদের তুলনায় লোধারা আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে। লোধাদেরকে ব্রিটিশ সরকার অপরাধী উপজাতি হিসেবে গণ্য করেছিল, এবং তারপর প্রাক ও উত্তর-উপনিবেশিক যুগে তাদের একটি ডি-নোটিফাইড উপজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর, তারা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক আদিম উপজাতি গোষ্ঠী (PTG) হিসাবে পুনরায় মনোনীত হয়। এখন আবার লোধাদের কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষভাবে দুর্বল উপজাতীয় গোষ্ঠী (PVTG) হিসাবে পুনরায় মনোনীত করেছে। পশ্চিমবঙ্গে, লোধারা প্রধানত পুরুলিয়া ,পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় কেন্দ্রীভূত।
আগে লোধাদের প্রধান জীবিকা ছিল জঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করা এবং শিকার করা।এখন একদিকে বিশ্বায়ন এবং অন্যদিকে জঙ্গল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লোধাদের একটি বড় অংশ কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে,কিছু সংখ্যক লোধা শ্রমিক হিসাবে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। লোধাদের ভূমিহীনতা তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা বলে মনে করেন লোধা সমাজের মানুষেরা।তাদের মতে লোধাদের পরিবারগুলিতে পাট্টা ভূমির বিতরণ ঠিক করা হয়নি৷ অন্যদিকে লোধারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘরের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সুবা নায়েকের মতে,প্রতি বছর ভোট আসে ,ভোট যায় কিন্তু আমাদের কথা কোনও দলই ভাবে না। শুনছেনতো প্রধানমন্ত্রী –মুখ্যমন্ত্রী সবাই আসছে ঘোষণা করছে,আমাদের জন্য কোনও ঘোষণা নাই।‘’
বর্তমানে লোধারা (Lodha) বেশিরভাগই ধীরে ধীরে তাদের পেশা শিকার থেকে কৃষিতে স্থানান্তরিত করেছে যার জন্য তাদের ভোরে বাড়ি থেকে বের হতে হয় এবং সন্ধ্যায় ফিরতে হয়। কিছু লোধা বর্তমানে বনজ দ্রব্য সংগ্রহ ও কৃষি দিনমজুর হিসাবে কাজ করছে। লোধাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জমি আছে যেখানে তারা মৌসুমে ফসল চাষ করে অন্যথায় তারা শ্রমের কাজ করে, বড় শহরে রাজমিস্ত্রির কাজ করে, ঝুড়ির মতো হস্তশিল্পের পণ্য বিক্রি করে। লোধরা, বিশেষ করে মহিলারা, কাঠ, লতা, বিভিন্ন ধরনের পাতা এবং গাছপালা (যার মধ্যে কিছু খাবার হিসাবে বা তাদের ঔষধি গুণাবলীর জন্য ব্যবহৃত হয়) সংগ্রহ করতে বনে যায়। তারা কিছু তাদের ভোগের জন্য রাখে এবং বাকিটা বাজারে বিক্রি করে। আর্থ-সামাজিক জীবনে টিকে থাকার জন্য এটি তাদের একমাত্র জীবিকা। শহরে কাজ করতে আসা লোধা যুবক বিবু লোধার মতে, “শিক্ষার চেয়ে উপার্জন সবচেয়ে প্রয়োজনীয়”। তার মতে আমাদের সাত জনের একটি পরিবারকে মাসে এক হাজার টাকায় বেঁচে থাকতে হয়,তাই তারা যেদিন কাজ না করে বা কাজ পায় না সেদিন তাদের খাওয়ার কিছুই থাকে না। সর্বোপরি, তারা সারা দিনে যা উপার্জন করে তা তাদের খাবারে ব্যয় করে। সুতরাং, সেক্ষেত্রে, পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে প্রতিদিন কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়, শিশুরা একটু বড় হলে তারা একটু একটু করে কআজ পড়াশুনা তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় একটি বিষয়্কারছরণ পরিবারের প্রতিটি সদস্য সেদিন অন্তত একটি সঠিক খাবার খেতে পারে। সরকার কিছু কল্যাণমূলক প্রকল্প তৈরি করেছে যাতে প্রতিটি পরিবার এই প্রকল্পগুলির সুবিধাগুলি পেতে পারে এবং একটি ভাল জীবিকা অর্জন করতে পারে। পরিশেষে, তাদের উন্নত জীবিকার সুযোগের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হবে।
সম্প্রতি এটি লক্ষ্য করা গেছে যে লোধা (Lodha)সমাজে অ-উপজাতি প্রভাব খুব বেশি বাড়ছে। ধীরে ধীরে তারা ভোগবাদের বস্তুর লালসার ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। তাদের বস্তুগত চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু দারিদ্র্য কমেনি। ফলে তাদের সমাজে অনেক অসামাজিক কাজ ও অন্যান্য বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। তারা মদ্যপান, অপুষ্টি ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে অসুস্থতায় ভুগছে।অন্যদিকে বিশ্বায়নের ফলে তাদের সমাজে কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। এতে তাদের প্রান্তিকতা কমেছে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু শিশু বিভিন্ন সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পের কারণে এখন শিক্ষার সাথে যুক্ত হচ্ছে, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি হয়েছে সেই সাথে তাদের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার বেড়েছে।
আরও পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন