Parthenium: ভারতে ৩৫ লক্ষ মিলিয়ন হেক্টর জমি পার্থেনিয়াম দখল করেছে

উত্তরাপথঃ বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সাতটি আগাছার মধ্যে পার্থেনিয়াম (Parthenium) আমাদের জীবন ও পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। এটি বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক আগাছা বলে বিবেচিত হয়। এই আগাছাটি ১৯৫৫ সালে আমেরিকা থেকে ভারতে এসেছিল। তারপর থেকে আজ অবধি গত ছয় দশকে ধীরে ধীরে আজ পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আমেরিকা থেকে আমদানি করা এর বীজগুলি ভারতে ৩৫ লক্ষ মিলিয়ন হেক্টর জমি দখল করেছে। যে গতিতে এই আগাছাটি বংশ বিস্তার করছে তাতে  আগামী তিন থেকে চার দশকের মধ্যে এটি সমগ্র ভারতকে দখল করে নেবে। চাঁদের আলোর মতো সবুজ ও উজ্জ্বল দেখতে এই পার্থেনিয়াম প্রাণ দেওয়ার বদলে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। গত ছয় দশকে, এটি সহজেই গৃহস্থ বাড়ি থেকে, অফিস, খেলার মাঠ, খালি জমি, রাস্তার দুপাশ, রেললাইন সহ সারা ভারতের চাষযোগ্য জমিতে শিকড় গেড়েছে। শুধু তাই নয়, এই গাছটি তার আশেপাশের অঞ্চলের জমির উর্বরতাকে অনেক কমিয়ে দেয় ,তারফলে জমি অনুর্বর হয়ে ওঠে। সেই সাথে পার্থেনিয়াম মানুষ পশুপাখি, পরিবেশ ও ফসলের ক্ষতি করে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হল এর গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছে যা মানুষের বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক মারাত্মক রোগের কারণ হচ্ছে। এর ফুলে যে পরাগ থাকে তা বাতাসের সাথে মিশে আমাদের ফুসফুসে চলে যায়,এছাড়াও এই উদ্ভিদের সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণ ঘটে।

পার্থেনিয়াম গাছের পরিবার কিভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এটি কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে? একটি পার্থেনিয়াম গাছ এক সময়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বীজ উৎপন্ন করে। এটি বাতাস এবং জলের সাথে বৃদ্ধি পায়।বছরে তিনবার জন্ম নেয়। জুন থেকে আগস্টের মধ্যে এর সর্বাধিক বৃদ্ধি ঘটে। গ্রীষ্মকালে এর বৃদ্ধি কম হয়।

পার্থেনিয়ামের প্রভাব রোধে করণীয়

১।গাছে ফুল ফোটার আগে সেগুলোকে উপড়ে ফেলুন এবং মাটিতে পুঁতে দিন।

২। এক লিটার জলে ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে স্প্রে করুন।

৩। জমি খালি রাখবেন না, চাষ করতে থাকুন।

৪। বৃষ্টিনির্ভর এলাকায় দ্রুত বর্ধনশীল ফসল যেমন ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার ইত্যাদি রোপণ করুন।

৫। এছাড়াও পার্থেনিয়াম নির্মূলের জন্য আপনি একজন কৃষি বিজ্ঞানীর পরামর্শ নিতে পারেন।

কী করবেন না

১। এই গাছে ফুল ফুটে যাওয়ার পরে, এটি ফেলে দেবেন না বরং এক জায়গায় একটি গর্ত করুন এবং এটি পুঁতে দিন।

২। শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের পার্থেনিয়াম গাছে কাছে খেলতে বা ঘুমাতে দেবেন না।

৩। প্লাস্টিক এবং গ্লাভস ছাড়া এটি স্পর্শ করবেন না।

রোগগুলো কি কি?

চুলকানি, একজিমা, অ্যালার্জি, ফুসফুসের সংক্রমণ, হাঁপানি, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, দাঁতের প্রদাহ ইত্যাদি রোগ পার্থেনিয়ামের প্রভাবে হয়। তাই শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় আক্রান্ত বা ঘনঘন ত্বকের সমস্যায় অক্রান্ত ব্যক্তিদের সবসময় পার্থেনিয়াম গাছ থেকে দূরে রাখবেন।  

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো কি

পার্থেনিয়াম(Parthenium) মানুষের চর্মরোগ, একজিমা, অ্যালার্জি, হাঁপানি, জ্বর ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। প্রভাব অতিরিক্ত হলে, এটি একজন ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।পার্থেনিয়াম অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও অত্যন্ত বিষাক্ত। বর্তমানে পার্থেনিয়ামের দ্রুত বিস্তারের কারণে, অন্যান্য দরকারী গাছপালা ধ্বংস হতে শুরু করেছে।এটি জীববৈচিত্র্যের জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠছে ।

গত ছয় দশকে আন্দামান ও কেরালা ছাড়া দেশের ৩৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে পার্থেনিয়াম ছড়িয়ে পড়েছে।১৯৫৫-৫৬ সালে, এটি PL ৪৮০ চুক্তির অধীনে আমেরিকা থেকে ভারত গম আমদানি করে,  গমের সাথে পার্থেনিয়ামের বীজও ভারতে আসে। আজ তা দেশের প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।এমনকি আমেরিকাতেও পার্থেনিয়াম সমস্যা মারাত্মক আকার ধারন করেছে। সেখানেও ম্যানুয়াল অপসারণ, ভেষজনাশক দিয়ে নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চলছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top