আশাজী (বাস্তব ঘটনা কেন্দ্রীক)

মৈত্রেয়ী আগরওয়ালা, মালদা

কিছু দিন আগে কালিম্পং বেড়াতে গিয়ে পরিচয় হয় শিলারিগাও নামে একটি পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা গ্রাম্য মহিলা আশাজীর সাথে। নেপালী ভাষা ছাড়া সাবলীল ভাবে কোনো ভাষা বলতে না পারলেও ভাঙা ভাঙা হিন্দি তে কথা বলতে পারেন তিনি। প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের জন্য ঘরের বাইরে যাওয়া যাচ্ছিলোনা। তাই আশাজীর সাথে একটা সারাদিন আড্ডা মেরে কাটালাম, আর জানতে পারলাম এমন কিছু অজানা তথ্য……

গোর্খাদের মহিলা কেন্দ্রীয় সমাজে মেয়েদের অনেক সন্মান পরিবারের মধ্যে। মেয়েরা কি পরাশোনা করতে পারে? প্রাথমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করলেও খুব সাধারণ পরিবারে মেয়েদের পড়াশোনা হয় না। এইভাবে অনেক মেধাবী ছাত্রী হারিয়ে যায় নিয়ম নীতির বেড়াজালে। মেয়ে মানে চুলা চাক্কি, বাবার সংসারে পরে শ্বশুরবাড়িতে। মেয়েদের স্বামী সন্তান মানুষ আর ঘরবাড়ি সামলানোর বাইরে কাজ বলতে সবজি চাষ, গরু, মুরগি পালন করা ইত্যাদি। মেয়েদের সরকারী কাজ, বা বেসরকারী কাজকর্মের ব্যাপারে পরিবার কতোটা উদ্যোগী?

একগাল হেসে বললেন স্মরণ কে তো এই কারণেই মরতে হয়েছিলো। নিয়মের বাইরে গিয়ে সে পড়াশোনা দশম ক্লাস পর্যন্ত করে তার চাচার বাড়ি কেরলে চলে যায়। সেখানে আরো পড়াশোনা করে একটি বাচ্চাদের স্কুলে পড়ায়। এই গ্রামের মেয়ে স্মরণ। বাবা মা জানতে পেরে বুঝিয়ে দিন কয়েকের কথা বলে এখানে ফিরিয়ে আনে, তারপর আগে থেকেই যে ছেলের সাথে বিয়ে দেবে বলে ঠিক করে রেখেছিল তার সাথেই  বিয়ের দিন স্থির করেন।

স্মরণ তার ভাবী স্বামী কে জিজ্ঞেস করেছিল কয়েকটি প্রশ্ন? বিয়ের পর সে কি আবার কেরলে যেতে পারবে? উত্তর আসে কখনোই না। আপনি তো সেইভাবে কিছু ই করেন না, তাহলে আমার দায়িত্ব কিভাবে নেবেন? উত্তর আসে বাড়িতে গরু ও মুরগী অনেক আছে, তেমনভাবেই তুমি থাকবে।

স্মরণ আবার বলেন মুরগি ,গরু আর একটি মেয়ে কি একরকম? উত্তর আসে ওরা তো মেয়েমানুষের মতোই সন্তান দেয়, পালন করে তবে এক হবে না কেন? স্মরণ এই কথা শুনে বিয়ে করবে না জানিয়ে দেয় বাড়িতে। ওর মা ওকে টেনে নিয়ে যায় ভাবী শ্বশুরবাড়ি তে। সেখানে ঐ বাড়ির সবার সামনে বলতে বলে সে কি বলছে বিয়ে নিয়ে?

স্মরণ বলেছিল যে সে বিয়ে করবে না। গরু ও মেয়ে কি এক হলো? উত্তরে সেই বাড়ির মেয়েরা  হাতের কাছে যা পেলো তাই দিয়ে স্মরণের উপর চড়াও হলো যে সে মেয়েমানুষ হয়ে কেন প্রশ্ন করছে, কেন সে তার বাড়ির ছেলের রোজগার নিয়ে কথা বলেছে?

মেয়েরা অকপটে স্বীকার করছে  গরু কে মা মনে করা হয়, গরুর সন্মান আছে সেখানে  মেয়েকে গরু মনে করা হলে কি অন্যায় হলো। এই মেয়ে বাইরে থেকে নষ্ট মেয়ে হয়ে গেছে, আমাদের অন্য মেয়েরাও এর সাথে থাকলে সমাজ খারাপ হয়ে যাবে গ্রামের মানুষেরা এইসব কথা আলোচনা করার পর আর স্মরণকে দেখা যায় নি। শোনা যায় রাতের আঁধারে গাছে বেঁধে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে নাকি তাকে, তবে সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারে না। এইরকম আরো অনেক অজানা তথ্য নিয়ে আবারও আমি আপনাদের জানাবো। কথাগুলো বলেছেন আশাজী। তাই এই গল্পগুলোর শিরোনামে থাকবেন আশাজী।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top