গল্প না সত্যি

অসীম পাঠক: বাসস্টপে কুড়ি মিনিট দাঁড়িয়ে, রুটের শেষ বাসের এতো লেট হবার কথা নয় এখন তো সমস্যাই সমস্যা। এবার কি করবে বিনয়– শহরের নামকরা হাসপাতালে বাবার চিকিৎসা চলছে, বাড়ি ফেরাটা দরকার কাল পরশুর মধ্যে কিছু টাকা ডিপোজিট করতে হবে। এমন সময় খবর এলো গাড়ি আজ আসবে না , বিনয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, টাকার যোগাড় করতে হবে আর তাছাড়া হাসপাতালে একজন ছাড়া থাকতে দেয়না রোগীর সাথে , স্ত্রী সবিতাকে রেখে সে ফিরছে। বাড়িতে মায়ের কাছে বাচ্চা দুটোকে রেখে এসেছে, এমনিতেই টানাটুনির অভাবের সংসার , কোনরকমে দিন গুজরান। পকেটে স্বচ্ছ টাকাও নেই যে গাড়ি ভাড়া করে সে বাড়ি ফেরে । এমন সময় একটা কালো স্করপিও গাড়ি তাকে সাইডে রেখে পেরিয়ে যায়, কিছুদূর গিয়ে গাড়িটা দা়ঁড়িয়ে আবার ব্যাক করে। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বিনয়কে হাঁক পাড়ে চশমা চোখে কাঁচা পাকা দাড়িতে তারই সমবয়সী মধ্য চল্লিশের আরোহী। বিনয় সামনে গিয়ে চিনতে পারে না। আরোহী বিনয়ের কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে কিরে চিনতে পারলি না , আমি অমর …. বিনয় চমকে ওঠে অমরের কথা সে সব জানে। কোলকাতার মাফিয়া চক্রের কেউকেটা একজন বস। তার নামে সতেরোটা মার্ডার কেস চারটে ব্লাস্ট কেস ঝুলছে।

বিনয়ের গা ছমছম করতে শুরু করে, ক্লাশ ওয়ান থেকে টেন অবধি একসাথেই পড়াশোনা। অমর বলে , ভয় পাচ্ছিস গাড়িতে ওঠ , বাড়িতে ছেড়ে দেবো, বলেই একপ্রকার জোর করেই তাকে গাড়িতে তোলে, সামনের সিটে অমরের দেহরক্ষী। কিছু তফাতে আর একটা গাড়ি, অমর বলে ওটাতে ওর পোষা লোকেরা আছে। গাড়িতে বসেই অমর শোনে বিনয়ের বাবার অসুস্থতা ও আর্থিক অসুবিধার কথা। কিছু সময় পর বিনয় ধাতস্থ হয়ে বলে, এ লাইনে কেনো এলি, তুই তো খারাপ ছিলি না । গলা ছেড়ে হেসে ওঠে অমর, কিছু পরে বলে, সব ভাগ্য রে, নাহলে তোর মতো ক্লাশে বরাবরের ফার্স্ট ছেলে আজ একটা কেরানীর চাকরি করে। বিনয়ের সেই সাবেকি পুরানো বাড়িটা অমরের চেনা।কতোবার এখানে বিনয়ের মায়ের বানানো পিঠেপুলি খেয়ে গেছে। কথায় কথায় বাড়ির সামনে গাড়ি এসে পড়ে। বিনয় নামার সময় অমরকে চা খেয়ে যাবার কথা বলতে গিয়েও থমকে যায় । উল্টে অমরই দুহাজার টাকার একটা নোট বাড়িয়ে বলে, এটা তোর বাচ্চাদের জন্য চকোলেট কিনে দিস। বিনয় আমতা আমতা করে নোটটা নেয়, গাড়ি দ্রুত বেগেই বেরিয়ে যায়, বিনয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো।

স্নান সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, বিছানায় শুয়ে পড়তেই কয়েকদিনের অনিদ্রা ক্লান্তি তে ঘুমে ঢলে পড়ে সে।
রাত তখন কটা মনে নেই দরজায় টোকা শুনেই দরজা খুলে চমকে যায় বিনয়, একি এতো রাতে আবার অমর তার সামনে। একটা চেন দেওয়া ব্যাগ বিনয়ের দিকে বাড়িয়ে অমর বলে, এটা রাখ কাকুর চিকিৎসা করা বাড়িটা মেরামত করাবি আর তারপর বাকী যেটা বাঁচবে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিস।
অমর আর কোন কথা বলার অবকাশ না দিয়ে ঝড়ের বেগে চলে যায় , দরজা বন্ধ করে বিনয় রুমে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুটো বেজে দশ মিনিট, ব্যাগটা আলমারিতে রেখে আবার সে ঘুমিয়ে পড়ে।
খবরটা সকালেই পায় বিনয়। খবরের কাগজ নিউজ চ্যানেল সব জায়গায় ব্রেকিং নিউজ রাত একটায় হাইওয়ে তে গুরুতর দুর্ঘটনায় নিহত মাফিয়া ডন অমর মন্ডল,

এ কি করে সম্ভব। কিন্তু কার কাছেই বা জানতে চাইবে বিনয় যে আসল সত্যিটা কি ? মরার পরেও উপকার করে গেলো কৈশোরের বন্ধু নাকি সে আবার ফিরে আসছিলো টাকা নিয়ে বিনয় কে দুঃসময়ে সাহায্য করতে। উত্তর নেই , যেটুকু আছে তা হলো অমরের জন্য একফোঁটা চোখের জল।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top