পেনিসিলিন অ্যালার্জি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে তৈরি PALACE

উত্তরাপথঃ যুগান্তকারী উন্নয়নে, গবেষকরা বিশ্বে-প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করতে প্রস্তুত যা পেনিসিলিন অ্যালার্জি আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে বিপ্লব ঘটাতে পারে৷  এই অধ্যয়নের লক্ষ্য একটি নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নির্ধারণ করা, যারা বর্তমানে তাদের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণে সীমিত অ্যান্টিবায়োটিক বিকল্পগুলির মুখোমুখি তাদের জন্য এই নতুন অধ্যায়ন আশার আলো। এই উদ্ভাবনী ট্রায়ালটিকে  চিকিৎসা পদ্ধতিতে  রূপান্তরিত করতে পারলে বিশ্বব্যাপী রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

পেনিসিলিন অ্যালার্জি হল সবচেয়ে সাধারণ ওষুধের অ্যালার্জি, যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। যদিও অনেক ব্যক্তি বিশ্বাস করেন যে তাদের পেনিসিলিন থেকে অ্যালার্জি রয়েছে,কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা গেছে যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রিপোর্ট করা অ্যালার্জি হয় ভুল বা সময়ের সাথে সাথে সমাধান হয়ে গেছে। ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর একটি রিপোর্ট অনুসারে আমাদের দেশে প্রতি ১০,০০০এর মধ্যে ১-৫ শতাংশ রোগী পেনিসিলিন অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ।এই সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা এবং সঠিক রোগ নির্ণয়ের সমস্যার ফলে প্রায়ই রোগীদের বিকল্প, কম কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যায় এবং বিকল্প  অ্যান্টিবায়োটিকটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় ।

বিখ্যাত গবেষকদের একটি দলের নেতৃত্বে পেনিসিলিন অ্যালার্জি ক্লিনিকাল ডিসিশন রুল (PALACE) নামে একটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল  অধ্যয়ন শুরু করা হচ্ছে , যার লক্ষ্য একটি ক্লিনিকাল সিদ্ধান্তের নিয়ম তৈরি করা যাতে রোগীদের সঠিকভাবে অ্যালার্জি সনাক্ত করা যায় এবং রিপোর্টে অ্যালার্জি সত্ত্বেও নিরাপদে পেনিসিলিন গ্রহণ করতে পারে।এই গবেষণাটি পেনিসিলিন অ্যালার্জির সাথে যুক্ত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার চেষ্টা করবে। PALACE অধ্যয়নের লক্ষ্য একটি বিকল্প পদ্ধতির বিকাশ করা যা প্রকৃত পেনিসিলিন অ্যালার্জি এবং অন্যান্য প্রতিকূল প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।

PALACE অধ্যয়নের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল একটি ক্লিনিকাল সিদ্ধান্তের নিয়ম তৈরি করা এবং এমন ব্যক্তিদের সনাক্ত করা যারা পেনিসিলিন অ্যালার্জিটিক হওয়া সত্ত্বেও নিরাপদে পেনিসিলিন গ্রহণ করতে পারবে। এটি রোগীর ইতিহাস, ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার একটি ব্যাপক মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে।

PALACE গবেষণায় নথিভুক্ত পেনিসিলিন অ্যালার্জি রোগীদের একটি বড় দল জড়িত থাকবে। অংশগ্রহণকারীদের একটি বিশদ চিকিৎসা ইতিহাস পর্যালোচনা, শারীরিক পরীক্ষা এবং অ্যালার্জি পরীক্ষা সহ একাধিক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয় মূল্যায়ন করা হবে। গবেষণা দলটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াগুলির প্রকৃতি এবং তীব্রতার তথ্য সংগ্রহ করবে, সেইসাথে ত্বকের পরীক্ষাও করবে। পেনিসিলিন অ্যালার্জির ধরন এবং ঝুঁকির কারণগুলি  বিস্তারিত সনাক্ত করতে সংগৃহীত ডেটা ভালোভাবে পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ করা হবে।

পেনিসিলিন অ্যালার্জি সঠিকভাবে নির্ণয়ের মাধ্যমে রোগীদের জন্য চিকিৎসার বিকল্পগুলিকে প্রসারিত করতে পারে, বিকল্প অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করতে পারে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। এই গবেষণায় রোগীর  স্বাস্থ্যর ব্যাপারে যেমন নজর দেওয়া হবে তেমনি পেনিসিলিন সহ অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় প্রযোগ বন্ধ করার ব্যাপারেও চিন্ত-ভাবনা করা হবে।এই গবেষণাটি সফল হলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসার খরচ অনেকটা কমানো যেতে পাররে। ।

PALACE এর অধ্যয়ন এই অ্যালার্জির সমস্যা সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের সূচনা করবে ।এই নতুন গবেষণার ফলে লোকে নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদে পেনিসিলিন গ্রহণ করতে পারবে ।এছাড়াও PALACE অধ্যয়নের লক্ষ্য হল চিকিৎসকদের  পেনিসিলিন ব্যবহারের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার প্রদান করা, যা শেষ পর্যন্ত রোগীদের এবং সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ঘোষণা হল ভারতের শীর্ষ বিজ্ঞান পুরস্কার শান্তি স্বরূপ ভাটনগর প্রাপকদের নাম  

উত্তরাপথঃ এটি আশ্চর্যজনকভাবে ২০২২ সালে, প্রথমবারের মতো, বিজ্ঞানে ভারতের শীর্ষ বার্ষিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়নি।এক বছর স্থগিত রাখার পর, সোমবার ২০২২ সালের শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, যেখানে ১২ জন তরুণ বিজ্ঞানীকে ভারতের শীর্ষ বিজ্ঞান পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।ভাটনগর পুরষ্কার, CSIR-এর প্রথম মহাপরিচালক শান্তি স্বরূপ ভাটনাগরের নামানুসারে, প্রতি বছর সাতটি বৈজ্ঞানিক শাখায় গবেষকদের অসামান্য কৃতিত্বের জন্য দেওয়া হয়। জীববিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং পৃথিবী, বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর এবং গ্রহ বিজ্ঞান - এর অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত অসামান্য গবেষকদের নির্বাচন করা হয়। পুরস্কারে ৫ লক্ষ টাকা নগদ ও একটি প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। .....বিস্তারিত পড়ুন

তিব্বতে ওজোন স্তরের গর্ত গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে

উত্তরাপথঃ ওজোন স্তর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি অপরিহার্য দিক, যা স্ট্রাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত। এটি সূর্য দ্বারা নির্গত ক্ষতিকারক অতিবেগুনী (UV) বিকিরণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওজোন স্তরের অবক্ষয় , বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর ধরনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে । এরকম একটি পরিণতি হল তিব্বতে ওজোন স্তরের গর্ত যা সেখানকার গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে।তিব্বতকে, প্রায়শই "বিশ্বের ছাদ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।এটি একটি বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র এবং অনন্য আবহাওয়ার নিদর্শন সহ এক বিশাল অঞ্চল। এর বিশাল এলাকা জুড়ে উচ্চ পর্বতমালা, মালভূমি এবং গভীর উপত্যকা রয়েছে । .....বিস্তারিত পড়ুন

এবার থেকে সংসদের কর্মীরা নতুন ইউনিফর্ম সহ ভারতীয় ঐতিহ্য প্রদর্শন করবে

উত্তরাপথঃ আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদের বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা ৩১ আগস্ট সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহলাদ যোশী করেছিলেন। অধিবেশন চলাকালীন কেন্দ্রের দ্বারা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ভারত রাখার প্রস্তাবও আনা হতে পারে।সংসদের বিশেষ অধিবেশন এগিয়ে আসার সাথে সাথে, কর্মীদের পরের সপ্তাহে নতুন ভবনে যাওয়ার সময় সংসদ কর্মীদের নতুন ইউনিফর্ম পরতে হবে।এই ইউনিফর্মগুলিতে ভারতীয় সংস্কৃতির উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । নেহেরু জ্যাকেট' এবং খাকি রঙের প্যান্ট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নতুন ড্রেস কোড সংসদের উভয় কক্ষে কার্যকর করা হবে।ইউনিফর্মটি তৈরি করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (NIFT)। তবে নতুন সংসদ ভবনে আনুষ্ঠানিক প্রবেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত হয়েছে,সেদিন গণেশ চতুর্থীর একটি ছোট 'পূজা' অনুষ্ঠান হবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বাংলাদেশে ইলিশের দাম, প্রভাব রাজ্যেও

উত্তরাপথঃ বাংলাদেশ ও ইলিশ এই দুটি নাম একে অপরের পরিপূরক মনে হলেও বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা। সূত্র মাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে  প্রকৃতির অপার দান হলেও শিকার থেকে শুরু করে বাজারজাত হওয়া পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই বাড়ছে বাংলাদেশে ইলিশের দাম। এর সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভের অঙ্ক যোগ হয়ে তা চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।পরিস্থিতি এমন যে গরিব তো দূর থাক মধ্যবিত্তের পাতেও এখন আর জুটছে না ইলিশ। বুধবার বরিশালের পাইকারি বাজারে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয় ৬০ হাজার টাকা মন দরে। ৪২ কেজিতে মন হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে প্রায় সাড়ে ১৪শ টাকা। খুচরা বাজারে গিয়ে যা বিক্রি হয় ১৬ থেকে ১৮শ টাকা। যে কারণে জাতীয় এই মাছ এখন শুধু বিত্তশালীদের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top