স্কুল ব্যাগের অতিরিক্ত ওজনের কারণে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ছাত্রী

উত্তরাপথঃ একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা সম্প্রতি খবরের শিরোনামে আসে  পিঠে বইয়ের ভারি ব্যাগ নিয়ে স্কুলের পাঁচতলার সিঁড়ি থেকে বিপজ্জনক ভাবে পড়ে গুরুতর জখম হল এক ছাত্রী। লিলুয়ার অগ্রসেন বালিকা শিক্ষাসদনের দশম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ভঞ্জচৌধুরী এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার তার মেরুদণ্ডে বড়সড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। কয়েকদিন না গেলে সঙ্কট কেটেছে কি না তা বলা সম্ভব নয় বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি একটি প্রতীকী ঘটনা মাত্র। এর আগেও  স্কুল ব্যাগের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে এক্ষেত্রে সরকার ভারতের স্কুল ব্যাগ নীতি ২০২০,  এই সমস্যাটিকে সমাধানের লক্ষ্যে ঘোষণা করেছে এবং তাতে বেশ কিছু নির্দেশিকা দিয়েছে। এই নির্দেশিকায় –

১। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত, স্কুলব্যাগের ওজন শিক্ষার্থীদের মোট শরীরের ওজনের ১০% এর বেশি হওয়া উচিত নয়।

২। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের স্কুলে ব্যাগ বহন করা উচিত নয়।

৩। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত, শিক্ষকদের সুপারিশ করা হয়েছে যে শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক না দেওয়ার জন্য।

৪। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত শিশুদের জন্য, বাড়ির কাজের সীমা প্রতি সপ্তাহে দুই ঘন্টা হওয়া উচিত।

৫। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য, হোমওয়ার্কের সীমা প্রতিদিন এক ঘন্টা হওয়া উচিত। একইভাবে, নবম এবং তদূর্ধ্ব ক্লাস প্রতিদিন দুই ঘন্টা হওয়া উচিত।

৬। এছাড়াও স্কুলগুলিতে লকারের মতো অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা উচিত কারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বই বহন করতে সক্ষম হবে না।

কিন্তু সরকারের এই নির্দেশিকা আসার পরও ছাত্র- ছাত্রীদের বইয়ের ব্যাগের অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়নি।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে মেয়েটির ব্যাগের ওজন তার শরীরের ওজনের ২০% ছিল, যা নিরাপদ সীমার অনেক বেশি ছিল । আমাদের দেশের বেশীরভাগ স্কুলের ছাত্র -ছাত্রীদের বইয়ের ব্যাগের যে ওজন থাকে তা ছোটদের পক্ষে তো বটেই বড়দের ক্ষেত্রেও তা বহন করা কষ্টকর।অথচ আমাদের দেশের প্রায় বেশীরভাগ ছাত্র- ছাত্রীকে বাধ্য করা হয় প্রতিদিন ভারী বইয়ের ব্যাগ বহন করে স্কুলে নিয়ে যেতে।

এই ঘটনা, দুর্ভাগ্যবশত, সারা দেশে প্রচলিত একটি পদ্ধতিগত সমস্যা তুলে ধরে। এটা আমাদের চোখ খুলে দেয় যে অগণিত ছাত্র -ছাত্রীরা আজ এই সমস্যার মুখোমুখি । একাডেমিক সময়সূচীর অতিরিক্ত চাপ তাদের ব্যাকপ্যাক অস্বাভাবিক ভারি করে তুলেছে যা তাদের শরীরকে যেমন ভারাক্রান্ত করছে তেমনি তাদের মনকেও মানসিক চাপে রাখছে।  

ব্যাগের ওজন সীমিত করার জন্য ভারতের স্কুল ব্যাগ নীতি ২০২০ র নির্দেশিকা এখনও কেন বাস্তবায়ন করা যায়নি এই ব্যাপারে দ্রুত অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষা নিয়ন্ত্রকদের এগিয়ে আসতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা অযথা চাপের শিকার না হয়। স্কুলগুলিকে এই সমস্যা দূর করতে ডিজিটাল বিকল্পগুলিও বিবেচনা করতে হবে, যেমন ই-বুক এবং অনলাইন সংস্থানগুলিকে কিছু ক্ষেত্রে গ্রহণ করতে হবে যাতে বইয়ের ব্যাগের ওজন কিছুটা কমানো যায়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top