

ছবি -প্রতীকী
উত্তরাপথ: হার্ট অ্যাটাক বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। অনুমান প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষের শুধুমাত্র হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যু হয়েছে। Hubrecht ইনস্টিটিউট থেকে Jeroen Bakkers নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিণ্ডের পুনর্জন্মকে কার্যকর করার উপায় খুঁজে বের করার পিছনে একটি প্রক্রিয়ার উপর আলোকপাত করেছে। এই নিবন্ধে হৃৎপিণ্ডের পুনর্জন্মকে ঘিরে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করব।
লিভার এবং ত্বকের তুলনায়, হৃৎপিণ্ডের নিজেকে ঠিক (Auto renewal) করার ক্ষমতা অনেক সীমিত । হৃদপিন্ডের পেশী যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এটি সাধারণত দাগ টিস্যু গঠন করে, যা সঠিকভাবে হৃৎপিণ্ডের কাজ করার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু প্রাণী, যেমন জেব্রাফিশ এবং নবজাত ইঁদুর, তাদের হৃদয়কে সম্পূর্ণরূপে নিজেরাই ঠিক করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি হৃদপিণ্ডের পুনর্জন্মের পেছনের প্রক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন। নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে মনোনিউক্লিয়ার ডিপ্লয়েড কার্ডিওমায়োসাইটস (এমএনডিসিএম) নামক একটি নির্দিষ্ট ধরণের হার্ট সেল পুনর্জন্ম প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কোষগুলির পূর্বের স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু গুলিকে বিভক্ত এবং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে হিপ্পো সিগন্যালিং পাথওয়ের সক্রিয়করণ, হৃদপিণ্ডের আকার এবং টিস্যু পুনর্জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে, যা হার্টের পুনর্জন্মের জন্য অপরিহার্য। এই পদ্ধতির মাধ্যমে , গবেষকরা প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুরের হৃদয়ের পুনর্জন্মের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে সক্ষম হয়েছেন।
হৃৎপিণ্ডের পুনর্জন্মের পিছনে মূল প্রক্রিয়ার আবিষ্কার ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিণ্ড মেরামত করার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে। এমএনডিসিএম এবং হিপ্পো সিগন্যালিং এর ভূমিকা বোঝার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা মানুষের হৃদপিণ্ডের পুনর্জন্মকে উদ্দীপিত করতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে পুনর্জন্ম প্রদানকারী ওষুধের দুর্দান্ত কার্যকারীতা রয়েছে। গবেষকরা স্টেম সেল থেরাপি, টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জিন থেরাপি সহ হার্টের পুনর্জন্মকে উন্নত করতে এবং এর কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির উপর গবেষণা করছেন। হিপ্পো সিগন্যালিং পাথওয়ে এবং MNDCMs হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য থেরাপির বিকাশের ক্ষেত্রে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে যা ক্ষতিগ্রস্ত হৃদয়ের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে।
সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলি চমকপ্রদ হলেও, এই ফলাফলগুলিকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদয়ে হিপ্পো সিগন্যালিং পাথওয়েকে কীভাবে কার্যকরীভাবে সক্রিয় করা যায় এবং হৃদপিণ্ডের টিস্যুর নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত পুনর্জন্ম নিশ্চিত করা যায় তা গবেষকদের নির্ধারণ করতে হবে। উপরন্তু, সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে চিকিৎসার উপযুক্ত সময় এবং ডোজ বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
হৃৎপিণ্ডের পুনর্জন্ম সম্পর্কে আমাদের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং গবেষকদের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। সেইসাথে হৃদপিন্ডের পুনর্জন্মের জটিলতাগুলি সম্পূর্ণরূপে উন্মোচন করার জন্য ক্রমাগত গবেষণা প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং দরকার গবেষণার জন্য তহবিল এবং সহায়তা ,যা এই ক্ষেত্রের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে পারে এবং আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ হৃৎপিণ্ডের পুনর্জন্ম সম্পর্কে কার্যকর চিকিৎসার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের পুনর্জন্মের পিছনে মূল প্রক্রিয়ার উদ্ঘাটন, বিশেষ করে এমএনডিসিএম এবং হিপ্পো সিগন্যালিং পাথওয়ের ভূমিকা, ক্ষতিগ্রস্থ হৃৎপিণ্ডগুলি মেরামত করার ক্ষেত্র এক নতুন পথ দেখায়। গবেষণায় প্রাপ্ত এই নতুন উপলব্ধিগুলি পুনর্জন্মমূলক ঔষধ পদ্ধতির বিকাশের পথ প্রশস্ত করে , কার্ডিয়াক কেয়ারে বিপ্লব ঘটাতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিণ্ড মেরামত এবং পুনর্জন্ম প্রদান করার সম্ভাবনা একটি দুর্দান্ত সম্ভাবনা যা বিশ্বব্যাপী হৃদরোগে আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষকে আবার তাদের পুরাতন জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন