নাগরিক আন্দোলন বিষয়ে মালদার গাজোলে সভা

উত্তরাপথঃ আজ মালদা জেলার গাজোলে অনুষ্ঠিত হলো নাগরিক আন্দোলন বিষয়ে একটি বিশেষ সভা। ‘সারা ভারত নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদ’র গাজোল শাখার কার্যালয়ে বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সভা শুরু হয়। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০০৩ এবং নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৯-এর আইনী প্যাঁচে পড়ে বিপন্ন হবে ভারতের কোটি কোটি মানুষ। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উদ্বাস্তু বাঙালি সমাজ, আদিবাসী ও মুসলমানদের একাংশ।

এইসব মানুষদের রক্ষা করতে এবং সাংবিধানিক নানা অধিকার কায়েম করার জন্য রাজ্যে সদ্য গঠিত হয়েছে ‘ সংবিধান বাঁচাও মঞ্চ’l দেশভাগের বলি হওয়া লক্ষ লক্ষ বাঙালি কার্যত বেনগারিক হয়ে আছেন ২০০৩ সালের সিএএ-এর ২(১) বি ধারা অনুসারে। ৩ (সি) ধারা অনুসারে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বও হরণ করেছে তৎকালীন সরকার। ফলে ভারতে জন্মালেই আর মিলবে না নাগরিকত্ব। এমনকি ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড থাকলেই কেউ নাগরিক নন নতুন নাগরিকত্ব আইনে। “আমি ভোটার, তাই আমি নাগরিক” — এই কথার কোনো আইনী বৈধতা নেই। চোখের সামনেই আছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এনআরসি আসামে প্রথম লাগু হতেই ১৯ লাখের ওপরে মানুষ তালিকা বহির্ভূত হয়েছেন। তার প্রায় ১৭ লাখ মানুষই বাঙালি। আসামের ক্ষেত্রে কাট অফ ডেট ধার্য হয়েছে ২৪ মার্চ ১৯৭১। আসাম ছাড়া সারা ভারতের জন্য এনআরসির প্রথম ধাপ এনপিআর করার কাট অফ ডেট হলো ১৯ জুলাই ১৯৪৮। অর্থাৎ, সিটিজেনশিপ কার্ড না থাকলে লাগবে ওই তারিখের আগের বসবাসের প্রমাণপত্র।

এই অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলই ব্রাহ্মণ্যবাদী এই অমানবিক আইনের বিরুদ্ধে সরব নন। রাজ্যের তথা সারা দেশের নাগরিক আন্দোলের বাঙালি জননেতা সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস ২০০৪ সাল থেকে এক নাগাড়ে জীবনমরণ লড়াই করে যাচ্ছেন। তিনিই ছিলেন আজকের আলোচনার মুখ্য এবং একক বক্তা। তিনি বলেন, “এই জটিল ইস্যুটাকে জাতীয় ইস্যু করে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব আদায় করতে না পারলে একদিন রোহিঙ্গাদের মতো অবস্থা হবে ভারতের বাঙালিদের।” গবেষক ও লেখক জীবনকুমার সরকার বলেন,” হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে ভারত থেকে বাঙালিদের নিকেশ করতে চায়। বাঙালি হিন্দু-মুসলমান ইস্যু ভুলে যদি ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তাহলে এনআরসিতে মৃত্যু অনিবার্য।” এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আরাফাত আলী, ভজন রায়, প্রবীরকুমার ভক্ত, আব্দুল জব্বার, রবীন্দ্রনাথ ঢালী, সুবোধ সূত্রধর, মতুয়া গোঁসাই ভজহরি রায়, জহরলাল রায়, সনাতন ঋষী, স্বপনকুমার চৌধুরী প্রমুখ দলিত-মুসলিম নেতৃত্ব। সভায় সকলেই প্রতিশ্রুতি দেন বাবাসাহেব আম্বেদকরের সংবিধান যে কোনো উপায়ে রক্ষা করবো। সভা শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Scroll to Top