সম্পাদকীয় – Educated Unemployment আমাদের প্রায় চার ট্রিলিয়ন অর্থনীতির সমস্যা

এটি এমন একটা সময় যে সময়ে ভারতের অর্থনীতি ৩.৭৩২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে ,ভারত পৃথিবীর চতুর্থ দেশ যারা সবচেয়ে কম খরচে সফল ভাবে মঙ্গল অভিযান করেছে। তাই আমরা ভারতীয়রা বিশ্ব মঞ্চে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বগুরু হওয়ার লক্ষ্যে নিজেদের সাফল্য নিয়ে গর্ব করতে ব্যস্ত। এই সময় দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান সামনে এসেছে । ২০২৩ সালে আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৭.৭০ শতাংশ এবং এই একই বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ২৫ বছরের কম বয়সী শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের (Educated unemployment )হার ৪২ শতাংশের বেশি। প্রসঙ্গত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা যা ১৯৫১ সালে ২.৪ লাখ ছিল, ১৯৬১ সালে ৫.৯ লাখ, ১৯৭১ সালে ৩২.৮ লাখ, ১৯৮১ সালে ১ কোটি ১০ ​​লাখ এবং ১৯৯১ সালে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখে উন্নীত হয়। ২০০৪ – ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৭ – ১৮ সালে এই ক্ষেত্রে গ্রাফটি নিচে নেমে এসেছে। ২০০৪-০৫ সালে শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৫.২ শতাংশ, যা ১০১৭-১৮ সালে বেড়ে ১৭.৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে, শহরগুলিতে শিক্ষিত পুরুষদের মধ্যে বেকারত্বের হারও ২০১১-১২ সালে ৩.৫ – ৪.৪ শতাংশ থেকে ২০১৭ – ১৮ সালে ১০.৫ শতাংশে পৌঁছেছে ।

এই প্রতিবেদনগুলি একসঙ্গে দেখলে চোখের সামনে একটি চিত্র ভেসে ওঠে যে, আমাদের দেশে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের (Educated unemployment) সমস্যা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।বেকারত্বের এই গুরুতর রূপ অর্থনৈতিক মন্দার লক্ষণ এবং সরকারের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ যার দায় কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকার নিজেদের উপর স্বীকার করেন না ।তারা নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য দরিদ্র জনগণকে মাসে ৫০০/১০০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে, নূন্যতম দামে রেশন, গ্যাস সিলিন্ডার, চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা বলবেন এমনকি বিনামূল্যে মোবাইল ও ল্যাপটপ দেওয়ার কথা বলবেন কিন্তু শিক্ষিত যুবক- যুবতীদের চাকুরির ব্যবস্থা করবে না।আবার যদি কোথাও চাকুরির পরীক্ষাও হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই প্রকাশিত হয়ে যায়, অথবা চাকুরির পরীক্ষা হয়ে গেলেও তার নিয়োগ হয় না কারন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়োগের আগেই আদালতের স্থগিতাদেশ চলে আসে। সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতাগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয় না ঘটনা প্রবাহের ফলে হয় তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।   

আমাদের দেশে শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে দুই ধরনের বেকারত্ব দেখা যায়। দৃশ্যমান বেকারত্ব এবং অদৃশ্য বেকারত্ব। দৃশ্যমান বেকারত্বের ক্ষেত্রে, একজন শিক্ষিত ব্যক্তি সম্পূর্ণ বেকার, আবার অদৃশ্য বেকারত্বে, ব্যক্তি তার শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে স্থায়ীভাবে নিম্ন স্তরের চাকরি গ্রহণ করে এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। ভারতে উভয় ধরনের বেকারত্বের পরিমাণ বিশাল।

ভারতে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের (Educated unemployment) প্রধান কারন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা্র ব্যবসামুখী না হওয়া, হীনমন্যতা নিয়ে শ্রমসাধ্য কাজ দেখা, চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য না থাকা, শিল্প ও অফিসে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি হওয়া এবং আত্মকর্মসংস্থানের প্রবণতা না থাকা। আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারত্বের সমস্যার অবসান ঘটাতে হলে আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বেশী সংখ্যায় শিক্ষিত লোকেদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং সরকারি ক্ষেত্রে আরও বেশী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, শিক্ষাকে ব্যবসামুখী করতে হবে, চাহিদা ও যোগানের সমন্বয় ঘটাতে হবে এবং আত্মকর্মসংস্থানের প্রসার ঘটাতে হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top