

আমরা কেন অন্য ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হই । ছবি – উত্তরাপথ
উত্তরাপথ; আকর্ষণ মানুষের জীবনের সম্পর্কের একটি জটিল এবং আকর্ষণীয় দিক। আমরা প্রায়শই কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হই, একটি চৌম্বকীয় টান অনুভব করি । আকর্ষণের বিজ্ঞান সেই অন্তর্নিহিত কারণগুলিকে উন্মোচন করে। সম্প্রতি বোস্টন ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি ব্যক্তি মনে করেন যে তাদের একটি নিজস্বতা রয়েছে যা তাদের পছন্দ এবং অপছন্দকে নির্ধারণে অবদান রাখে। এই নিবন্ধে আমরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে আমাদের পছন্দগুলিকে প্রভাবিত করে এমন মনস্তাত্ত্বিক এবং জৈবিক কারণগুলির অনুসন্ধান করব।
শারীরিক চেহারা নিঃসন্দেহে প্রাথমিক আকর্ষণে ভূমিকা রাখে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান পরামর্শ দেয় যে আমরা স্বাভাবিকভাবেই এমন ব্যক্তিদের ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হই যারা ভাল স্বাস্থ্য এবং প্রজনন সুস্থতার লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে। মুখের কাঠামো এবং শরীরের অনুপাত প্রায়ই আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচিত হয়। যাইহোক, গবেষণায় দেখা গেছে যে শুধুমাত্র শারীরিক আকর্ষণ দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বা রোমান্টিক অনুভূতির গভীরতা নির্ধারণ করে না।
ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যও আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা প্রায়শই এমন ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হই যাদের নিজস্ব একটি গুন রয়েছে যা আমাদের নিজেদের পরিপূরক বা ভারসাম্যের অনুভূতি প্রদান করে। উদারতা, রসিকতা, বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মবিশ্বাসের মতো বৈশিষ্ট্যগুলি আকর্ষণের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিচিতি এবং সাদৃশ্য আকর্ষণকে অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত করে । আমরা এমন জিনিস বা ব্যক্তিদের প্রতি আকৃষ্ট হই যাদের আমরা নিয়মিত মুখোমুখি হই, যেমন সহকর্মী বা সহপাঠী।একই মনোভাব, বিশ্বাস এবং পটভূমিতে সাদৃশ্য বোঝার এবং স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতি তৈরি করতে পারে, যা আকর্ষণ বাড়ানোর কারণ হতে পারে।
ব্যক্তিদের মধ্যে রসায়ন প্রায়ই একটি অস্পষ্ট কিন্তু শক্তিশালী শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে ফেরোমোন, আমাদের দেহ দ্বারা নির্গত রাসায়নিক সংকেত, আকর্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও মানুষের আকর্ষণের উপর ফেরোমোনাল প্রভাবের পরিমাণ এখনও বিতর্কিত, এমন প্রমাণ রয়েছে যে সুগন্ধ প্রাথমিক আকর্ষণকে প্রভাবিত করতে পারে।
শারীরিক এবং পৃষ্ঠ-স্তরের আকর্ষণের বাইরে, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য মানসিক এবং বৌদ্ধিক সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক সামঞ্জস্য ও সহানুভূতি একটি গভীর বন্ধন তৈরিতে অবদান রাখে। অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং মানসিক সমর্থন ঘনিষ্ঠতা এবং দীর্ঘমেয়াদী আকর্ষণ বৃদ্ধি করে।
এটা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি ব্যক্তির আকর্ষণ তার সাংস্কৃতিক এবং ব্যক্তিগত বৈচিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। সাংস্কৃতিক পরিকাঠামো , সামাজিক প্রত্যাশা, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমাদের পছন্দগুলি এবং আমাদের আকর্ষণীয় গুণাবলীকে গঠন করে। একজন ব্যক্তি যাকে আকর্ষণীয় বলে মনে করেন তা অন্যের পছন্দের থেকে আলাদা হতে পারে, আকর্ষণের বিজ্ঞান (Science of Attraction) আকর্ষণের বিষয়গত প্রকৃতিকে আমাদের সামনে তুলে ধরে।
আকর্ষণের বিজ্ঞান প্রকাশ করে যে এটি একটি বহুমুখী ঘটনা যা মনস্তাত্ত্বিক, জৈবিক এবং সামাজিক কারণগুলির সংমিশ্রণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। যদিও শারীরিক আকর্ষণ প্রাথমিকভাবে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে,সেই সাথে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, পরিচিতি, সাদৃশ্য, রসায়ন, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সংযোগ সবই আকর্ষণের গভীরতায় অবদান রাখে। শেষ পর্যন্ত,বলা যেতে পারে আকর্ষণ একটি অনন্য এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা , যা আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ, অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন কারণের দ্বারা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন