চন্দ্রযান-৩: চন্দ্রপৃষ্ঠ অন্বেষণের জন্য ভারতের কম খরচের মিশন

ছবি -প্রতীকী

উত্তরাপথ: চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২ -এর পর,চন্দ্রযান-৩ চন্দ্রপৃষ্ঠ অন্বেষণের জন্য ভারতের কম খরচের মিশন ভারতের মহাকাশ সংস্থা, ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO), তার সম্প্রতি চন্দ্র অভিযান, চন্দ্রযান-৩ গত ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে যাত্রা শুরু করে যা চাঁদে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪০ দিন।

এর আগে আমেরিকা অ্যাপেলো-১১ মিশনে উৎক্ষেপণের মাত্র ৪ দিনের থেকে একটু বেশী সময়ে চাঁদে পৌঁছে গিয়েছিল। রাশিয়ার লুনা-১ মিশনে চাঁদের কাছাকাছি পৌঁছতে সময় লেগেছিল মাত্র ৩৬ ঘণ্টা। ২০১০ সালে চিনের চন্দ্রযান চ্যাংই-২ চাঁদে পৌঁছতে সময় লেগেছিল ৪ দিন।এখন প্রশ্ন এর আগে তিনটি দেশ যেখানে এত কম সময়ে চাঁদে পৌঁছাতে পেরেছিল সেখানে ভারতের এত বেশী সময় লাগার কারণ কি?তাহলে চন্দ্রযান-৩ মিশনের এর সাফল্য কোথায়?

চন্দ্রযান-৩ চন্দ্রপৃষ্ঠ অন্বেষণের জন্য ভারতের কম খরচের মিশন আর সেই সাথে চন্দ্রপৃষ্ঠের আরও অন্বেষণ এবং অধ্যয়ন করা। চন্দ্রযান-৩ তার পূর্বসূরি চন্দ্রযান-২-এর আংশিক সাফল্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে, যা দুর্ভাগ্যবশত অবতরণ পর্বের সময় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। মিশনের লক্ষ্য চন্দ্রযান-২-এর অর্জনের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা এবং চন্দ্রপৃষ্ঠের ব্যাপক অনুসন্ধান করা।

চন্দ্রযান-৩ অভিযানের এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এর কম খরচের পদ্ধতি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ISRO মিশনের বৈজ্ঞানিক লক্ষ্যগুলির সাথে আপস না করে কম খরচে চাঁদে পাঠানোর  উদ্ভাবনী কৌশল তৈরি করেছে। পূর্ববর্তী মিশনের জন্য বিকশিত বিদ্যমান প্রযুক্তি এবং কাঠামো পুনঃব্যবহার করে, ISRO মিশনের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে,এবং এটিকে একটি অর্থনৈতিকভাবে লাভদায়ী প্রচেষ্টা করে তুলেছে।

এর আগে অ্যাপেলো-১১ মিশনে নাসা চাঁদে পৌঁছানোর জন্য ট্রান্সলুনার ইনজেকশন নামে পরিচিত একটি সরাসরি ট্র্যাজেক্টোরি ব্যবহার করেছিল। শক্তিশালী এই উৎক্ষেপণ বাহন অ্যাপোলো মহাকাশযানটিকে সরাসরি চাঁদের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছিল । তারফলে খুব সময়ে এটি চাঁদে পৌঁছাতে পেরেছিল ।এই পুরো মিশনে খরচ হয়েছিল ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা, চন্দ্রযান-৩ কে চাঁদে পৌঁছে দেবার  জন্য ভিন্ন গতিপথ অনুসরণ করে। এই মিশনটি ধীরে ধীরে মহাকাশযানের গতি বাড়াতে এবং এটিকে চাঁদে পাঠানোর জন্য পৃথিবীর কক্ষপথ এবং ইঞ্জিন বার্নের একটি সিরিজ নিয়োগ করে। এই পদ্ধতিটিতে তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী লঞ্চ ভেহিকেল, জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (GSLV) মার্ক-III ব্যবহার করা হয়। এই লঞ্চ যানবাহনের সীমাবদ্ধতার জন্য মিশনটিকে সম্পূর্ণ করার জন্য আরও ধীরে ধীরে এগানোর কৌশল বেছে নেওয়া হয়েছিল। এই পুরো মিশনে ভারতের খরচ হয় ৬৫০ কোটি টাকা।

চন্দ্রযান-৩-এর প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য হল চন্দ্রপৃষ্ঠের ভূপ্রকৃতি, খনিজবিদ্যা এবং জলের অণুর উপস্থিতি সহ বিভিন্ন বিষয়গুলিতে গভীরভাবে অধ্যয়ন করা। মিশনের লক্ষ্য চাঁদের উৎপত্তি, বিবর্তন এবং মানবতার জন্য এর সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের ধারনা বাড়ানো।সেইসাথে মহাকাশ অভিযানে ভারতের দক্ষতা প্রমান করা,কারণ এর আগে কোনও দেশ এত কম খরচে চাঁদে অবতরণ করতে পারেনি। চন্দ্রযান-৩ মিশন সফল হলে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top